পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২: অপরাধ ও শাস্তির ধারা অনুযায়ী বিশ্লেষণ

বাংলাদেশে ইন্টারনেট এবং ডিজিটাল মাধ্যমের অগ্রগতির সাথে সাথে পর্নোগ্রাফির অপব্যবহার দিন দিন বেড়ে চলেছে। সমাজ ও নৈতিকতাবিরোধী এই কার্যকলাপ রোধে সরকার ২০১২ সালে “পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২” প্রণয়ন করে। এই আইনে পর্নোগ্রাফির সংজ্ঞা, অপরাধের ধরন এবং এর জন্য নির্ধারিত শাস্তির বিধান স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

পর্নোগ্রাফির সংজ্ঞা (ধারা ২)

আইনের ২(চ) ধারায় বলা হয়েছে,

“পর্নোগ্রাফি” অর্থ কোনো ব্যক্তির নগ্নতা বা যৌন আচরণের ভিডিও, অডিও, ছবি, অঙ্কন বা অন্য কোনো উপস্থাপন যাহা কামোত্তেজক, বিকৃত বা নৈতিকতাবিরোধী।

 অপরাধ ও সংশ্লিষ্ট ধারা
১. পর্নোগ্রাফি তৈরি বা উৎপাদন (ধারা ৮)

যে কেউ যদি কোনো পর্নোগ্রাফি তৈরি, ধারণ, প্রস্তুত বা প্রকাশ করে, সে অপরাধী হবেন।

🔹 শাস্তি: সর্বোচ্চ ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং সর্বনিম্ন ২ লাখ টাকা জরিমানা

২. পর্নোগ্রাফি বিতরণ বা প্রচার (ধারা ৯)

যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ইন্টারনেট, মোবাইল বা অন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি প্রচার বা বিতরণ করেন, তাহা এই ধারায় অপরাধ বলে গণ্য হবে।

🔹 শাস্তি: সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড এবং সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা জরিমানা
🔁 পুনরায় একই অপরাধ করলে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।

৩. শিশু পর্নোগ্রাফি সংক্রান্ত অপরাধ (ধারা ১০)

যদি কোনো পর্নোগ্রাফি এমন হয় যেখানে ১৮ বছরের নিচে কোনো শিশু রয়েছে, তা হলে সেটি একটি গুরুতর অপরাধ।

🔹 শাস্তি: সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ৫ লাখ টাকা জরিমানা

৪. পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইলিং বা হুমকি (ধারা ১১)

যদি কেউ কাউকে পর্নোগ্রাফিক উপকরণ দেখিয়ে হুমকি দেয় বা ব্ল্যাকমেইল করে, তাহলেও এটি অপরাধ।

🔹 শাস্তি: সর্বোচ্চ ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ২ লাখ টাকা জরিমানা

📲 ডিজিটাল মাধ্যমে অপরাধ ও পুলিশের ক্ষমতা

আইনের ধারা ১৪ অনুযায়ী, পুলিশ তদন্তের জন্য পর্নোগ্রাফি সংক্রান্ত উপাদান জব্দ করতে পারে এবং সংশ্লিষ্ট ডিভাইস বাজেয়াপ্ত করতে পারে।
এছাড়া প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট বা সামাজিক মাধ্যম ব্লক করারও ব্যবস্থা রয়েছে।

বাংলাদেশের সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষা এবং তরুণ প্রজন্মকে নৈতিক অবক্ষয় থেকে রক্ষা করার জন্য এই আইন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্নোগ্রাফির ভয়াবহতা রোধে, বিশেষ করে শিশু পর্নোগ্রাফি ও ডিজিটাল মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করে এই আইন।

Facebook
WhatsApp
Twitter
LinkedIn
Pinterest

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Our Head Attorney
Monjur Elahi Porag