বাংলাদেশে শিশু আদালত
বাংলাদেশে শিশু আদালতগুলো আইনের সাথে সংঘর্ষে জড়িত শিশুদের অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২০১৩ সালের শিশু আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত এই বিশেষ আদালতগুলো শাস্তির পরিবর্তে পুনর্বাসনের উপর জোর দেয়, যাতে অল্পবয়সী অপরাধীদের ন্যায়বিচার এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে চিকিত্সা প্রদান করা হয়, যেমন জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ (সিআরসি)।
এই ব্লগে আমরা শিশু আদালতের ধারণা, ইতিহাস, প্রক্রিয়া এবং চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আলোচনা করব। এটি শিশু অধিকার সংরক্ষণে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে লেখা, এবং যেকোনো আইনি সহায়তার জন্য বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করুন।
শিশু আদালত কী?
শিশু আদালত হলো ১৮ বছরের নিচের শিশুদের অপরাধের অভিযোগ সংক্রান্ত মামলা পরিচালনার জন্য বিশেষায়িত আদালত। প্রাপ্তবয়স্ক আদালতের মতো নয়, এখানে শিশু-বান্ধব পরিবেশে কাজ করা হয় এবং পুনর্বাসনকে প্রধান লক্ষ্য করা হয়।
মূল নীতিগুলো:
- বন্ধ দরজায় শুনানি
- পরিচয় গোপন রাখা
- পুনর্বাসন-ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি
- প্রবেশন অফিসার এবং সমাজকর্মীদের অংশগ্রহণ
প্রধান আইন: ২০১৩ সালের শিশু আইন, যা ১৯৭৪ সালের শিশু আইনকে প্রতিস্থাপন করেছে।
কে শিশু হিসেবে বিবেচিত?
শিশু আইনের ২(৯) ধারা অনুসারে:
- ১৮ বছরের নিচের যেকোনো ব্যক্তি শিশু
- ৯ বছরের নিচে কোনো ফৌজদারি দায়িত্ব নেই
শিশু বিচার ব্যবস্থার ইতিহাস এবং উন্নয়ন
- ১৯২২: বেঙ্গল শিশু আইন চালু
- ১৯৭৪: স্বাধীনতার পর শিশু আইন দিয়ে শিশু আদালতগুলোকে আনুষ্ঠানিক করা
- ২০১৩: বড় ধরনের সংস্কার, যার মধ্যে রয়েছে:
- নিবেদিত শিশু আদালত
- জেলের পরিবর্তে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র (সিডিসি)
- মানসিক এবং সামাজিক সহায়তা বাধ্যতামূলক
২০২৫ সালের আপডেট:
- ডিজিটাল কেস ম্যানেজমেন্ট
- নির্দিষ্ট জেলায় ভার্চুয়াল শুনানি
শিশু আদালতে ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া (২০২৫)
গ্রেপ্তার এবং প্রথম যোগাযোগ
- পুলিশকে অবিলম্বে অভিভাবকদের জানাতে হবে
- হাতকড়া বা জনসমক্ষে প্রদর্শন নিষিদ্ধ
- শুধুমাত্র সার্টিফাইড প্রতিষ্ঠানে অস্থায়ী স্থানান্তর
জামিনের আবেদন
- শিশুদের জামিনের জন্য শক্তিশালী ভিত্তি রয়েছে
- সাধারণত শিশুদের অভিভাবক বা সার্টিফাইড এনজিওতে ছেড়ে দেওয়া হয়
বিচার প্রক্রিয়া
- ব্যক্তিগতভাবে শুনানি
- জন্ম নথি বা মেডিকেল পরীক্ষা দিয়ে বয়স যাচাই
- প্রবেশন অফিসার সামাজিক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়
সম্ভাব্য ফলাফল
- সতর্কতা এবং মুক্তি
- তত্ত্বাবধান সহ প্রবেশন
- গুরুতর মামলায় শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে স্থানান্তর (সর্বোচ্চ ৩-৫ বছর)
সাজার বিকল্পগুলোর টেবিল (২০২৫)
| অপরাধের ধরন | সাধারণ ফলাফল | পুনর্বাসনের ফোকাস |
|---|---|---|
| ছোটখাটো চুরি | প্রবেশন + সমাজসেবা | কাউন্সেলিং |
| আক্রমণ | স্বল্পমেয়াদী সিডিসি স্থানান্তর | রাগ নিয়ন্ত্রণ |
| সাইবার অপরাধ | ডিজিটাল সাক্ষরতা + প্রবেশন | অনলাইন নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ |
| গুরুতর অপরাধ | দীর্ঘমেয়াদী সিডিসি + শিক্ষা | পেশাগত দক্ষতা |
সূত্র: সমাজসেবা বিভাগের নির্দেশিকা
শিশু আদালতে শিশুদের অধিকার
প্রত্যেক শিশুর অধিকার রয়েছে:
- বিনামূল্যে আইনি প্রতিনিধিত্ব
- নিষ্ঠুরতা এবং শোষণ থেকে সুরক্ষা
- আটকে রাখার সময় শিক্ষা অব্যাহত রাখা
- হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করা
গুরুত্বপূর্ণ রায়: স্টেট বনাম রৌশন মন্ডল (২০০৭) – ন্যায়বিচারের মানদণ্ডের উপর জোর দেয়।
বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো (২০২৫)
- শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সীমিত সংখ্যা
- কিছু জেলায় মামলার ব্যাকলগ
- শিশু সাইবার অপরাধের বৃদ্ধি
- আরও প্রশিক্ষিত প্রবেশন অফিসারের প্রয়োজন
ইতিবাচক পদক্ষেপ ২০২৫-এ:
- ঢাকা এবং চট্টগ্রামে ডিজিটাল আদালত চালু
- বিচারক এবং সমাজকর্মীদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি
- এনজিও সহযোগিতা বৃদ্ধি
কীভাবে সাহায্য পাবেন?
যদি আপনি শিশু আদালতের মামলায় জড়িত হন, তাহলে:
- তাৎক্ষণিক জামিনের আবেদন করুন
- প্রতিরক্ষা কৌশল তৈরি করুন
- প্রবেশন অফিসারের সাথে সমন্বয় করুন
- মুক্তির পর পুনর্বাসন সহায়তা নিন
Frequently Asked Questions: বাংলাদেশে শিশু আদালত
১. শিশু আদালতের বয়স সীমা কত?
১৮ বছরের নিচে। ৯ বছরের নিচে কোনো ফৌজদারি দায়িত্ব নেই।
২. শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রগুলো কোথায় অবস্থিত?
প্রধান কেন্দ্র: টঙ্গী (ঢাকা), কোনাবাড়ী (গাজীপুর), যশোর। বিস্তারিত তালিকা সমাজসেবা বিভাগের ওয়েবসাইটে।
৩. শিশু মামলায় জামিন সাধারণত দেওয়া হয় কি?
হ্যাঁ – আদালত পরিবার বা সার্টিফাইড প্রতিষ্ঠানে ছেড়ে দেওয়াকে পছন্দ করে।
৪. শিশু মামলা কতদিন লাগে?
সাধারণত ৩-৮ মাস। ডিজিটাল আদালতগুলোতে বিলম্ব কমেছে।
৫. শিশু রেকর্ড মুছে ফেলা যায় কি?
হ্যাঁ – শিশু ১৮ বছর হলে রেকর্ড সিল করা হয়।
৬. আদালতে অভিভাবকদের অনুমতি আছে কি?
হ্যাঁ, অভিভাবকের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক।
৭. যদি শিশু ভিকটিম হয়?
ভিকটিম মামলা পরিবার আদালত বা শিশু সুরক্ষা ইউনিটে যায়।
শিশু অধিকার রক্ষায় সচেতনতা বাড়ানো দরকার। যদি কোনো আইনি সাহায়তার প্রয়োজন হয়, তাহলে বিশেষজ্ঞ আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করুন।



