বর্তমান ডিজিটাল যুগে সাইবার অপরাধ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এ কারণেই বাংলাদেশ সরকার ২০২৫ সালে নতুন একটি অধ্যাদেশ জারি করেছে যার নাম “সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫”। এই আইনটি ২০২৩ সালের বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করে প্রণীত হয় এবং এতে কয়েকটি নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে যা অনলাইন অপরাধ এবং সাইবার হুমকি প্রতিরোধে কার্যকর।
এই প্রবন্ধে আমরা এই নতুন আইনের অধীনে অপরাধ ও শাস্তি সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ ধারাসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
.
⚖️ গুরুত্বপূর্ণ ধারা অনুযায়ী অপরাধ ও শাস্তি
🔹 ধারা ১৫: সরকারি তথ্য অবৈধভাবে প্রবেশ বা ফাঁস করা
যদি কেউ সরকারের সংবেদনশীল বা শ্রেণিবদ্ধ তথ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে চুরি, ফাঁস বা পরিবর্তন করে—
-
শাস্তি: সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড বা ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা, বা উভয় দণ্ড।
🔹 ধারা ১৮: অননুমোদিত প্রবেশ (Hacking)
কোনও ব্যক্তি যদি অনুমতি ব্যতিরেকে কোনো কম্পিউটার সিস্টেমে প্রবেশ করে বা ক্ষতি করে—
-
শাস্তি: ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা।
🔹 ধারা ২১: ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতারণা
যদি কেউ ইলেকট্রনিক উপায়ে ভুয়া পরিচয়, কাগজপত্র, বা অর্থনৈতিক লেনদেন জাল করে—
-
শাস্তি: ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড।
🔹 ধারা ২৬: ধর্মীয় বা জাতিগত উসকানি (সংশোধিত ধারা)
ধর্ম, বর্ণ, জাতি বা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো তথ্য অনলাইনে প্রকাশ করলে—
-
শাস্তি: ২ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা।
🔹 ধারা ২৮: যৌন হয়রানি ও ব্যক্তিগত ছবি ভিডিও অপব্যবহার
ব্যক্তিগত ছবি/ভিডিও অনুমতি ছাড়া প্রকাশ, বিকৃতি বা ব্ল্যাকমেইল করলে—
-
শাস্তি: ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা।
🔹 ধারা ৩২: জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্ন ঘটানো
সাইবার মাধ্যমে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা বা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হলে—
-
শাস্তি: ৭ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং আর্থিক জরিমানা।
সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা ও তথ্য অধিকার রক্ষায় একটি যুগোপযোগী আইন। এটি যেমন অপরাধ দমন নিশ্চিত করে, তেমনি ব্যক্তিগত অধিকার ও বাকস্বাধীনতা রক্ষায়ও সচেষ্ট। এই আইনের সঠিক প্রয়োগ ও জনসচেতনতা গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।